তালাক হচ্ছে একটি আইনগত পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয় । তালাক একটি বিবৃতি বা পদ্ধতি-একে অপরের কাছ থেকে আলাদা হওয়ার জন্য। যা স্বামী বা স্ত্রী দুই পক্ষ থেকেই আসতে পারে ।
বাংলাদেশে তালাক সম্পর্কিত আইন ও নিয়ম মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১-এ পাওয়া যাবে। যা বাংলাদেশে মুসলিমদের জন্য কার্যকর লিখিত আইন। অন্য ধর্মানুসারীদের-যেমন খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের জন্য আলাদা লিখিত আইন আছে। তবে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত হিন্দুদের জন্য তালাকের কোনো লিখিত আইন নেই।
বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে এখানে সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক দেয়ার সংখ্যা বেশি।আইনেও সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে । বাংলাদেশে শুধু তালাক-এর জন্য স্পেশাল আইনজীবী নেয় বা প্রয়োজন মনে করে না যতক্ষণ না অপর পক্ষ কোনো ফৌজদারী মামলা করছে। স্বামীর জন্য তালাক দেয়া হচ্ছে আইনগত অধিকার যা বাংলাদেশি আইন এ বলা আছে ।
যেসব আইনজীবী বাংলাদেশে পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিশেষ করে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর আওতায় যারা প্রাকটিস করে তারাই সাধারণত তালাক আইনজীবী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে শুধুমাত্র তালাক নিয়ে প্র্যাকটিস করে এমন আইনজীবীর সংখ্যা একদম নেই বললেই চলে। ঢাকা শহরে খুবি কম চেম্বার বা ল-ফার্ম আছে যারা শুধুমাত্র পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্র্যাকটিস করে।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ তালাকের সাথে ভরণপোষণ, দেনমোহর ও কিছু ফৌজদারী বিষয় জড়িত থাকে। আমরা যখন তালাক নিয়ে আলোচনা করি তখন আমাদের সামনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও যৌতুক নিরোধ আইন সামনে চলে আসে।
আমাদের দেশে ৯৬% ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে যখন কোনো পুরুষ কোনো নারীকে তালাক নোটিশ পাঠায় তখন এর পরিবর্তে সেই নারী, পুরুষ এর বিরুদ্ধে একটি ফোজদারী মামলা দায়ের করে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে মামলা সাধারণত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করে থাকে। ম্যাজিস্ট্রেট তখন মামলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ সংশ্লিষ্ট থানার কাছে পাঠায় প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অথবা মামলাটিএক FIR হিসাবে নথিভুক্ত করার জন্য।
এ মামলাগুলোর কিছু সাধারণ ধারা আছে যেমন ধারা যৌতুক আইনের ৩/৪ ধারা, নারী ও শিশু আইনের ১১ ধারা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে তালাকের পদ্ধতি তিনটি। এগুলো অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
১। তালাকের নোটিশ প্রদান ।
২। সালিস এর উদ্যোগগ্রহণ ।
৩। ৯০ দিন অতিবাহিত হবার পরে তালাক এর সার্টিফিকেট গ্রহণ (একজন রেজিস্টারড নিকাহ রেজিস্টার)।
তালাক এর নোটিশ দেয়ার সময় এটা ধরেই নেয়া হবে যে যিনি নোটিশ প্রদান করেবন তিনি অবশ্যই পুরো দেনমহর টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা অন্যরকম, তালাকের সময় দেখা যায় যে তালাকের পুরো টাকা পরিশোধ করা হয় না অথবা অংশ বিশেষ পরিশোধ করা আছে।
সে কারণে তালাকের আইনজীবীর দায়িত্ব পুরো দেনমোহরের টাকা আদায় অথবা পরিশোধ করে দেয়া। তালাকের সময় আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল তালাকের নোটিশ দেয়ার পরে তিন মাস (ইদ্দতকালিন) ভরণপোষণ ও অন্যান্য ভরণপোষণ যেমন বাচ্চা থাকলে তাদের ভরণপোষণ স্বামী কর্তৃক প্রদান করা।
আর এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা পরিহার করতে চাইলে দুই পক্ষ বসে একটা সমঝোতা করা যেতে পারে। স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাকের উপরিউক্ত তিনটি পদ্ধতি মেনে তালাক দিতে হবে। স্বামী/ স্ত্রী যেই তালাক দেক না কেন , স্ত্রী দেনমোহর থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত হবে না।
ধন্যবাদান্তে,
জুরিস্ট কমিউনিকেশন ল ফার্ম
মোবাইলঃ 01886012863
ইমেইলঃ juristcommunication@gmail.com