ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ এবং ১৪৫ ধারায় শান্তি ভঙ্গের আশংকা দেখা দিলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্যকোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদিও উদ্দেশ্যগতভাবে ১৪৪ এবং ১৪৫ ধারার মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান তবুও প্রয়োগ, কারণ এবং অবস্থাগত দিক থেকে এই ধারার মধ্যে পার্থক্য আছে । নিচে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪ এবং ১৪৫ ধারার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো ।
উৎপাত বা আসন্ন বিপদের জরুরী ক্ষেত্রে ১৪৪ ধারার আদেশ দেওয়া হয় । অন্যদিকে স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে বিরোধ দেখা দিলে ১৪৫ ধারায় আদেশ দেওয়া হয়।
আইননানুগভাবে কর্মরত কোন ব্যক্তি বাধা, বিরোধ, প্রতিবন্ধকতা বা ক্ষতির আশংকা করলে বা মনুষ্য জীবন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশংকা থাকলে বা যখন গণশান্তি বিঘ্নিত হয় বা দাঙ্গা বা মারামারির আশংকা দেখা দেয় বা যদি দেখা যায় পরিস্থিতি খুবই জরুরী এবং জটিল , সেই ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে।
অন্যদিকে ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৫ জারী করতে পারে যদি জমি, জলাশয় বা এর সীমানা সংক্রান্ত কোন বিরোধ থাকে, বা ভূমিতে দখলজনিত কোন বিরোধ দেখা দিলে, বা জমির ফসল সংক্রান্ত কোন বিরোধ এবং এই সকল বিরোধের কারণে শান্তি ভঙ্গের দেখা দিলে।
১৪৪ ধারা অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু ১৪৫ ধারা শুধুমাত্র স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
১৪৪ ধারার অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কোন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে কোন কাজ থেকে বিরত থাকতে কিংবা কোন ব্যক্তিকে তার দখলীয় বা পরিচালনাধীন কোন সম্পত্তির ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান দিতে পারে। ১৪৫ ধারার অধীন ম্যাজিস্ট্রেট দখলের অধিকারী পক্ষের দখল নির্ধারণ করতে পারে,সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিতে পারে বা রিসিভার নিয়োগ করতে পারে ,
১৪৪ ধারার বিধান মহানগর এলাকায় প্রযোজ্য না। ১৪৫ ধারার বিধান মহানগর এলাকায়ও প্রযোজ্য।
সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারী করে ভিন্ন কিছু নির্দেশ না দিলে ১৪৪ ধারার আদেশ ২ মাসের অধিক বলবৎ থাকবে না। ১৪৫ ধারায় প্রদত্ত আদেশ কোন মামলার মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব বা দখল নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত বা মামলায় কোন নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
১৪৪ ধারার কার্যক্রম ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে। যদি তিনি মনে করেন যে ১৪৪ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তাহলে তিনি ১৪৪ ধারা জারী করতে পারে। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ সম্পর্কে পুলিশের রিপোর্ট থেকে বা অন্যকোনভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট সংবাদ পেলে ১৪৫ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যেহেতু পুলিশ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৫ ধারার অধীন আদেশ প্রদান করে, তাই পুলিশের নিকট স্থাবর সম্পত্তির দখল সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে প্রথমে বিরোধের কোন পক্ষ। এজাহার দায়ের করতে পারে।
১৪৪ ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট এককভাবে নির্দেশ দিতে পারে । এখানে শুনীর কোন বিধান নেই। কিন্তু ১৪৫ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট লিখিত আদেশ দ্বারা পক্ষদ্বয়কে হাজির হয়ে তাদের লিখিত বক্তব্য পেশ করার আদেশ দেয় এবং দখল নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য শ্রবণ করে।
১৪৪ ধারায় ক্রোক বা রিসিভার নিয়োগের কোন বিধান নেই। কিন্তু ১৪৫ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট ক্রোক বা রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিতে পারে যে ক্ষেত্রে বিরোধীয় সম্পত্তিতে কোন পক্ষ দখলের অধিকারী তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।
ধন্যবাদান্তে,
জুরিস্ট কমিউনিকেশন ল ফার্ম
মোবাইলঃ 01886012863
ইমেইলঃ juristcommunication@gmail.com