মানব পরিবারের সকল সদস্যের সমান ও অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহ এবং সহজাত মর্যাদার স্বীকৃতিই হচ্ছে বিশ্বে শান্তি, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তি । বাংলাদেশ সংবিধান ও এর বাইরে নয়, বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অধিকার সমান , এই সকল অধিকার এর মধ্যে কিছু অধিকার হলো মৌলিক অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার নিম্নে উল্লেখ করা হলো ।
[অনুচ্ছেদ–২৭]
আইনের চোখে সমতা: সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী ।
[অনুচ্ছেদ-২৮(১)]
ধর্ম প্রভৃতি কারনে বৈষম্য: কেবলমাত্র ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী,নারী পুরুষ বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
[অনুচ্ছেদ-২৮(২)]
নারী পুরুষের সমঅধিকার: রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।
[অনুচ্ছেদ–২৯(১)]
সরকারী নিয়োগ লাভে সমতাঃ (১) প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।
(২) কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না, কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।
[অনুচ্ছেদ–৩১]
আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার: আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। বিশেষত: আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোন ব্যাক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
[অনুচ্ছেদ–৩২]
জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা লাভের অধিকার: আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না ।
[অনুচ্ছেদ–৩৩]
গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ: কোন গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিকে গ্রেফতারের কারন জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যাক্তিকে তার মনোনিত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না। গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের চবিবশ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত তাকে উক্ত সময়ের অধিককাল আটক রাখা যাবে না।হবে।
[অনুচ্ছেদ–৩৪]
জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ: সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ এবং এ বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য
[অনুচ্ছেদ–৩৫]
বিচার ও দন্ড সম্পর্কে :
ক) এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দন্ডিত করা যাবে না।
খ) ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যাক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্যে বিচার লাভের অধিকারী।
গ) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।
ঘ) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্চনাকর দন্ড দেয়া যাবে না।
[অনুচ্ছেদ– ৩৬]
চলাফেরার স্বাধীনতা: জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সবর্ত্র অবাধ চলাফেরা, দেশের যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশে ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
[অনুচ্ছেদ– ৩৭]
সমাবেশের অধিকার: জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
[অনুচ্ছেদ– ৩৮]
সংগঠনের স্বাধীনতা: জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। তবে শর্ত থকে যে নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে কোন সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার থাকবে না।
[অনুচ্ছেদ– ৩৯]
চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা:
ক) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।
খ) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে এবং আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে
(১) প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।
(২) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে।
[অনুচ্ছেদ– ৪০]
পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা: আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসা পরিচালনার অধিকার থাকবে।
[অনুচ্ছেদ– ৪১]
ধর্মীয় স্বাধীনতা: আইন শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার সাপেক্ষে
ক)প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার থাকবে।
খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার থাকবে।
[অনুচ্ছেদ– ৪২]
সম্পত্তির অধিকার: আইনে আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারন, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিধিব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে। আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ব বা দখল করা যাবে না।
[অনুচ্ছেদ– ৪৩]
গৃহ ও যোগাযোগ : রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনগণের নৈতিকতা বা জনস্বার্থের প্রতিহুমকি সৃষ্টি না করলে কোন নাগরিকের গৃহে বলপূর্বক প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক করা যাবে না। এছাড়া ও প্রত্যেক নাগরিক তার চিঠিপত্রের অধিকার লাভ করবে।
[অনুচ্ছেদ– ৪৪]
মৌলিক অধিকার বলবতকরণ : সংবিধানের ৩য় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কোন ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে যেতে পারবে ।
ধন্যবাদান্তে,
জুরিস্ট কমিউনিকেশন ল ফার্ম
মোবাইলঃ 01886012863
ইমেইলঃ juristcommunication@gmail.com