বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এর আপিল বিভাগের এখতিয়ার বিচার বিষয়ে অপরিসীম। এই আদালত যা রায় দিবে তাই চুড়ান্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালতের নাম হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট।
এই সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে দুটি বিভাগ, যথা- আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ।বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে একজন প্রধান বিচারপতি রয়েছেন, যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নামে পরিচিত। রাষ্ট্রপতি তাহাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে তাকে নিযুক্ত করে থাকেন।
প্রত্যেক বিভাগের জন্য যতজন বিচারক প্রয়োজন ঠিক ততজন বিচাররকদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত। প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বিচারপতি গনদের নিয়োগ প্রদান করে থাকেন।
প্রধান বিচারপতি মহোদয় ও আপীল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল আপীল বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারকগন হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করে থাকেন। প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিগণ বিচারকার্জ পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন বা বেঞ্চ রয়েছে, তবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি মহোদয় প্রয়োজন অনুসারে অন্য যে কোনো স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করে সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত করার আদেশ প্রদান করতে পারেন।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হলে কোনো বাক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। কোনো বেক্তিকে আপীল বিভাগের বিচারক হতে হলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে কমপক্ষে ১০ (দশ) বছর এডভোকেট হিসেবে কাজ করার পূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বাংলাদেশে বিচার বিভাগীয় পদে ১০(দশ) বছর বিচারক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ ৬৭ বছর পর্যন্ত নিজস্ব পদে কর্মরত থাকতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার বা ক্ষমতা ও কার্যাবলিঃ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন কার্যের এখতিয়ার রয়েছে। এ দুটি কোর্টের ক্ষমতা, এখতিয়ার এবং কার্জ নিয়েই সুপ্রিম কোর্ট গঠিত। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ একত্রে মিলে সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সংবিধান ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করে এবং ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করে।
নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আপিল বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলিঃ
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগ থেকে প্রদত্ত রায়, ডিক্রি বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ সাপেক্ষে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনের কোনো ব্যাখ্যা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে পরামর্শ প্রদান করে থাকেন।
জনগনের ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনো ব্যক্তিকে আদালতে হাজির হতে ও দলিলাদি পেশ করার আদেশ প্রদান করতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত কোনো আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রীম কোর্টের যে কোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধঃস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্যই পালনীয় হবে।
এভাবে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনের ব্যাখ্যা, ন্যায়বিচার ও পরামর্শ প্রদান করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এবার সংক্ষেপে আপিল বিভাগের এখতিয়ার গুলো তুলে ধরা হলোঃ
আপীল এখতিয়ারঃ
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রী, আদেশ বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল শুনানীর ও তাহা নিষ্পত্তির এখতিয়ার আপীল বিভাগের থাকিবে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রী, আদেশ বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগের নিকট সেই ক্ষেত্রে অধিকারবলে আপীল করা যাইবে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রী, আদেশ বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে যে মামলায় এই অনুচ্ছেদের (২) দফা প্রযোজ্য নহে, কেবল আপীল বিভাগ আপীলের অনুমতিদান করিলে সেই মামলায় আপীল চলিবে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সংসদ আইনের দ্বারা ঘোষণা করিতে পারিবেন যে, এই অনুচ্ছেদের বিধানসমূহ হাইকোর্ট বিভাগের প্রসঙ্গে যেরূপ প্রযোজ্য, অন্য কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রেও তাহা সেইরূপ প্রযোজ্য হইবে।
পরোয়ানা জারী ও নির্বাহঃ
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কোন ব্যক্তির হাজিরা কিংবা কোন দলিলপত্র উদ্ঘাটন বা দাখিল করিবার আদেশসহ আপীল বিভাগের নিকট বিচারাধীন যে কোন মামলা বা বিষয়ে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের জন্য যেরূপ প্রয়োজনীয় হইতে পারে, উক্ত বিভাগ সেইরূপ নির্দেশ, আদেশ, ডিক্রী বা রীট জারী করিতে পারিবেন।
রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনাঃ
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।
উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারঃ
যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জন-গুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।
বিধি-প্রণয়ন-ক্ষমতাঃ