1. admin@adalatnews.com : Admin :
  2. juristcommunication@gmail.com : muradjc :
মুসলিম আইনে বিয়ে - আদালত নিউজ
শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

মুসলিম আইনে বিয়ে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ৫০৭ Time View
মুসলিম আইনে বিয়ে
মুসলিম আইনে বিয়ে

বিয়ে আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত ও রাসুল (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত । ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান বিয়ে । আদর্শ পরিবার গঠন, চারিত্রিক অবক্ষয় রোধ ও ধর্মীয় এবং সামাজিক স্বীকৃতিতে মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের অনুপম এক হাতিয়ার বিয়ে ।

একটি ছেলে ও মেয়ের সংসারধর্ম পালনের লক্ষে, ধর্মীয় ও সামাজিক সুরক্ষা দিতেই বিবাহ প্রথার জন্ম । মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে হলো একটি (কনট্রাক্টচুয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট ফর সিভিল ন্যাচার) দেওয়ানি চুক্তি ।

ইসলাম ধর্মের অন্য কোনো উৎস অথবা বাংলাদেশের প্রচলিত অন্য যেকোনো আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন মুসলিম ও পারিবারিক আইনের অধীনে একটি আইনসম্মত নিকাহ বা বিবাহ সম্পাদনের জন্য কয়েকটি শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে ।

বাংলাদেশের পারিবারিক আইনের আওতায় মুসলিমদের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক বিধানগুলো মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ (মুসলিম ফ্যামিলি ল অর্ডিনেন্স) অনুসারে পরিচালিত হয়ে থাকে । কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মুসলিম বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪-এর বিধান অনুযায়ী হয়ে থাকে ।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯-এ বলা আছে, বরের বয়স অবশ্যই ২১ বছর এবং কনের বয়স ১৮ বছর হতে হবে । সমাজের যেকোনো চুক্তি সম্পাদনের জন্য যেমন দুইপক্ষকে প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হয়, তেমনি বিয়ের চুক্তি সম্পাদনের জন্য দুই পক্ষকে প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিকের অধিকারী হতে হয়  । অন্যথায় সাধারণ চুক্তিরমত এ বিধানটিও আইন সম্মত হবে না। বাতিলযোগ্য হবে  ।

পক্ষ দুটির সম্মতির ব্যাপারে বলা আছে যে, একটি পক্ষ প্রস্তাব করার পর অপর পক্ষকে স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করতে হবে । বৈধ বিয়ে সম্পাদনের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম  । কোনো সুস্থ মস্তিস্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক সম্পন্ন মুসলমানের বিয়ে যদি তার সম্মতি ব্যতিরেকে করা হয়, তাহলে ওই বিয়ে চুক্তিটি বৈধ বিবাহ বলে গণ্য হবে না ।

একটি বৈধ বিবাহ সম্পাদনের জন্য বর কনেকে প্রস্তাব দেবে, যাকে ইজাব বলা হয় । আর কনে ওই প্রস্তাবটিতে সম্মতি দিয়ে কবুল বলে গ্রহণ করবে । একটি বৈধ বিবাহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্বাক্ষীদেরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।

হানাফি মত অনুসারে বিয়ের সাক্ষী সম্পর্কে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার কথা বলা হয়েছে  একজন পুরুষকে একজন পূর্ণ সাক্ষ্য এবং সাক্ষী হিসেবে একজন নারীকে একজন পুরুষের অর্ধেক ধরা হয়েছে  ।

অর্থাৎ একজন নারী স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগুন একজন পুরুষ স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গুনের অর্ধেক । কিন্তু বাংলাদেশের আইন (স্বাক্ষ্য আইন) অনুযায়ী নারী ও পুরুষ সমান গুরুত্ব পেয়ে থাকেন । সুতরাং বিয়ের স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত দুই জনের দুইজন পুরুষ দুইজন নারী অথবা একজন পুরুষ আর একজন নারী হতে পারে ।

ইসলামি শরিয়াহ পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে । কিন্তু এটি কিছুতেই শর্তহীন নয় । ভরণপোষণ, আবাসন শয্যাসঙ্গমনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতাবিধান করতে হবে ।

হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ৯০ জন স্ত্রী ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সময় এমন কিছু ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যাদের ৮ জন অথবা ৫ জন স্ত্রী ছিলেন। রাসুল (সা.) তাদের ৪ জন স্ত্রী রেখে বাকিদের তালাক দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ।

মুসলিম ও পারিবারিক আইন পরিচিত, মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা, মুসলিম বিবাহ তালাক নিবন্ধন আইন ও বিধিমালা, মুসলিম আইন, হ্যান্ড বুক অব মুসলিম ফ্যামিলি ল’ (ডিএলআর), বৈবাহিক আইন পরিচিতি- এসব আইন সমূহে বিশ্লেষণ করলে একজন মুসলিম পুরুষ কোন প্রেক্ষাপটে কতটি বিয়ে করতে পারেন ও বিবাহের ক্ষেত্রে কোন কোন শর্ত পালন করতে হয় সেগুলো নিন্মে আলোছনা করা হলো।

১. পক্ষগণের প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে । ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর বয়স হতে হবে । বাল্য বিবাহ হওয়া যাবে না ।

২. পক্ষগণের বিয়েতে সম্মতি থাকতে হবে (ইজাব ও কবুল) । নারীদের জোর করে বিয়েতে বাধ্য করানো যাবে না ।

৩. প্রাপ্ত বয়স্ক/বয়স্কা দুইজন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে পড়াতে হবে ।

৪. দেনমোহর বা মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে ।

৫. বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা ।

৬. একজন স্ত্রী হয়তো বন্ধা হতে পারে অথবা হতে পারে অসুস্থ হওয়ার কারণে তার সঙ্গে তার স্বামী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না অথচ একজন স্বামীর সন্তানের আকাঙ্খা থাকতে পারে । এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হলো এক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য একজন নারীকে বিয়ে করা ।

৭. এমনটি হতে পারে যে একজন নারী একজন ব্যক্তির আত্মীয়া এবং তার দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই এবং সে একজন অবিবাহিত নারী অথবা একজন বিধবা নারী । ওই নারীর জন্য এটি একটি উত্তম ব্যবস্থা যে, তাকে প্রথম স্ত্রীর পাশাপাশি দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নিজের পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া যেন সে ওই নারীকে পবিত্র রাখতে পারে । তার জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারে । তাকে একাকী ছেড়ে দেয়া এবং তার জন্য শুধু অর্থ ব্যয় করার মধ্য নিজেকে সীমাবদ্ধ করার চেয়ে এ পন্থা অধিক উত্তম ।

৮. ইসলামী শরিয়ত একটি শক্তিশালী সমাজ কাঠামো দেখতে চায় । এক্ষেত্রে পরিবারগুলোর মধ্যকার বন্ধন শক্তিশালী হওয়ার বৃহত্তর স্বার্থ থাকতে পারে । যেমনটা দেখা যায় মহানবী (সা.) এর জীবনে ,  তাঁর কোন কোন বিয়ে ছিল এ ধরনের বৈরী লোকদের বংশীয় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সন্ধী স্থাপনের নিমিত্তে । আর অন্যতম একটি উপায় হলো একাধিক বিয়ে করা ।

৯. একজন নারীর প্রতিমাসে ঋতুস্রাব হয় (হায়েজ) হয় । আর যখন তিনি সন্তান প্রসব করেন তখন তার ৪০ দিন রক্তচাপ (নিফাস) হয় । সে সময় একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে পারে না । কেননা হায়েজ ও নিফাসের সময় সহবাস করা হারাম এবং এটি যে ক্ষতিকারক তা মেডিক্যালি প্রমাণিত। তাই ন্যায় বিচার করতে সক্ষম হলে একাধিক বিবাহ করা অনুমোদিত । নারী সব সময় এমন থাকে না যে স্বামী তার সঙ্গে সহাবস্থানে থাকতে পারে । প্রথম কারণ প্রত্যেক নারীর জন্য মাসের কোনো এক সময় এমন অতিবাহিত হয় যখন তাকে পুরুষ থেকে দূরে থাকতে হয় । দ্বিতীয়ত, গর্ভকালীন অবস্থা । অর্থাৎ নারীকে নিজ ও নিজের সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার তাগিদে কয়েকমাস ধরে স্বামীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হয় । আবার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কয়েকমাস পর্যন্ত দূরে থাকতে হয় । এসব সময় নারীর জন্য কুদরতি প্রক্রিয়ায় স্বামীর সংস্পর্শ নিষিদ্ধ হয়ে যায় । পক্ষান্তরে স্বামীর জন্য স্ত্রীর সংস্পর্শে যেতে কোনো বাধা নিষেধ থাকে না । তখন যদি কোনো পুরুষের কামভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাহলে একাধিক স্ত্রী ছাড়া তার জন্য কী-ইবা করার থাকে ।

১০. প্রকৃতির নীয়মে পুরুষের চেয়ে নারীদের শক্তি দ্রুত বার্ধ্যকের শিকার হয়ে থাকে । যেখানে পুরুষের যৌবন পুরোপুরি অটুট থাকে এবং নারী বিদ্ধ হয়ে যায় । সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করা এত জরুরি হয়ে দাঁড়ায়, যেমন আগে প্রথম স্ত্রী বিবাহ করা আবশ্যক হয়েছিল । যে আইন একাধিক স্ত্রী নিষিদ্ধ হওয়ার কথা বলে, প্রকারান্তরে সে আইন ওই সব পুরুষকে নিজ কামশক্তি ব্যভিচারের মাধ্যমে প্রয়োগের ইঙ্গিত করে । যাদের যৌন শক্তি সৌভাগ্রক্রমে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত  অটুট থাকে এমন আইন কিভাবে সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকূলে হতে পারে ।

ইসলামী শরিয়াহ মতে একজন মুসলিম পুরুষ একসঙ্গে চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারবেন । কিন্তু এটি কিছুতেই শর্তহীন নয় । ভরণপোষণ, আবাসন শয্যাসঙ্গমনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতাবিধান করতে হবে ওই পুরুষকে ।

ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী একজন পুরুষ একত্রে চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারেন । বিয়ের ক্ষেত্রে পূর্বের স্ত্রীর অনুমিত শর্ত না । শক্তি সামর্থ্যবান ব্যাক্তি একসঙ্গে চারজন নারীকে বিয়ে করলে শরীয়াহ মোতাবেক কোনো অসুবিধা নেই । তবে এই পুরুষকে সব স্ত্রীর ক্ষেত্রে ইনসাফও কায়েম করতে হবে ।

ধন্যবাদান্তে,

জুরিস্ট কমিউনিকেশন ল ফার্ম

মোবাইলঃ 01886012863

ইমেইলঃ juristcommunication@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

ক্যাটাগরি

© All rights reserved © 2022 AdalatNews

Developed By AdalatNews