আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তি কি হতে পারে তা নিয়ে আজকের আলোচনা । আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান নয় এই কথাটা কমবেশি প্রায় সবারই জানা থাকলেও থেমে নেই আত্মহত্যা। আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তি কি তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্ধমুখি, কিছু দিন আগের কথা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী এবং শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীক আত্মহত্যা করেন। এই দুজনের আত্মহত্যার পেছনেও আছে প্ররোচনার অভিযোগ। এ দুটো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। অভিযোগ আছে স্ত্রী মিতু ও তার পরিবারের প্ররোচনায় তিনি আত্নহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যার প্রবণতা সবথেকে বেশি দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বয়স কম থাকায় তাদের মধ্যে আবেগ প্রবণতা কাজ করে বেশি । অনেকে আবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় কারো প্ররোচনাতে।
প্ররোচনা দানকারী আত্মহত্যাকারীকে এক অর্থে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। আর এজন্যই প্ররোচনা দানকারীর জন্য দেশের আইনে আছে শাস্তির বিধান। তবে অবশ্যই তা প্রমাণ সাপেক্ষে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনায় আইন যা বলে:
বাংলাদেশের আইনে আত্মহত্যায় প্ররোচনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯ক ধারায় বলা হয়েছে -যদি কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি তার কার্য দ্বারা সম্ভ্রমহানি করে এবং তার জন্য ও্ই নারী আত্মহত্যা করে তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তি উক্ত নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য অভিযুক্ত হবে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তি :
আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য বাংলাদেশের দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারা অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে-আত্মহত্যায় প্ররোচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থ দন্ড । তবে কারো প্ররোচনার জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা করেও যদি কেউ মারা না যায় তাহলে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দানকারীকে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদন্ড দেওয়া যেতে পারে। অবশ্যই তা সাক্ষ্য প্রমাণ সাপেক্ষে।
বাংলাদেশের প্রচলিত সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ৩২ ধারা অনুযায়ী আত্মহত্যাকারীর রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনা দানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে শুধুমাত্র একটি সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না ।সুইসাইড নোটের সমর্থনে আরো সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা লাগবে।