এক যুগে ট্রাইব্যুনাল থেকে যুদ্ধাপরাধে ৪২টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ১০৩ জন, এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে ৭১ জনের ।
ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশার জায়গা অনেকখানি পূরণ হয়েছে এমন দাবি করছে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা । তবে হতাশার কথাও বলছেন বিচারপ্রার্থী, সাক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা ।
ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার এক যুগে প্রত্যাশা – প্রাপ্তির, যে জায়গা নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে , যেসব মামলায় বিচারাধীন রয়েছে সেগুলো শেষ হলে তবেই পূর্ণতা পাবে।
জনবল ও অবকাঠামোগত সংকট নিয়ে এত অল্প সময়ে এতগুলো মামলার রায়কে অবিস্মরণীয় সাফল্য হিসেবে দেখছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সানাউল হক। ঘটনার ৪০ বছর পর বিচার শুরু করেও বিচারে যে অগগ্রতি হয়েছে, তা বিশ্বের মধ্যে একটি ইতিহাস হয়ে রইবে বলে আমি মনে করি। এই বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হবে । আর এ জন্য আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এবং সাক্ষীদের সাহসী ভূমিকার অবদান রয়েছে।
আরও যেসব মামলা বিচারাধীন এবং তদন্তাধীন আছে সেগুলো দ্রুত সময়ে শেষ হবে এমন প্রত্যাশা করেন সানাউল হক। তবে সাক্ষী সুরক্ষা আইন না থাকায় ভবিষ্যতে সাক্ষীরক্ষায় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলেও মনে করছেন তিনি।
তদন্ত সংস্থার প্রধান বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত শতভাগ সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তদন্ত সংস্থা। আমাদের দেয়া প্রত্যেকটি মামলার প্রতিবেদন অনুযায়ী আসামিদের সাজা হয়েছে। শুধু তাই নয়, শতভাগ সাজা হয়েছে । এটাই আমাদের তদন্ত সংস্থার অর্জন।’
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের জ্যেষ্ঠ সদস্য প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেছিলেন‘একাত্তরে যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার হয়েছে । কিছু কার্যকর হয়েছে। এখনও চলছে। আমরা যে বিচার করতে পেরেছি, এটাই আমাদের সফলতা।
‘অনেক প্রতিকূলতা দূর করে আমরা বিচারকাজকে এগিয়ে নিয়েছি । এই বিচারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে নিজেকে সার্থক বলেও মনে করছি। যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেকটা এগিয়ে আছি । তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’
হায়দার আলী জানান, এখনও যে পরিমাণ মামলা পেন্ডিং আছে সেগুলো শেষ করতে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল চালু করা দরকার। করোনার কারণে বিচারে কিছুটা দীর্ঘসূত্রতাও তৈরি হয়েছে।
তবে ট্রাইব্যুনালের অর্জন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির । প্রচুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, নাগরিক আন্দোলনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সরকার প্রথম দিকে এর প্রতি আন্তরিক থাকলেও রহস্যজনকভাবে পরে কেন জানি ভাটা পড়েছে।
দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে একটি ট্রাইব্যুনাল করে দেয়া হলো। এরপর বিভিন্ন সময় প্রসিকিউটরসহ জনবল এবং লজিস্টিক সংকট হলেও সেটি আর পুরণ হয়নী। এখন পুরো বিষয়টি খুঁড়িয়ে চলছে। ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশারও সৃষ্টি হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। প্রথমে একটি ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বিচারকাজে গতি আনতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এরপর দুজন বিচারপতির নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ট্রাইব্যুনাল ২ নাম নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরপর ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা কমে এলে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে পুনরায় একটি করা হয়। এরপর থেকে একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ চলছে।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এখন পর্যন্ত ৪২টি মামলায় ১০৩ জনের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। বিচারাধীন আছে ৩৮টি মামলা, যার আসামিসংখ্যা ২৩২ জন। এ ছাড়া আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০টি মামলা। যার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
ফাঁসি কার্যকর হয়েছে :-
ফাঁসি কার্যকর হয়েছে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহম্মদ কামারুজ্জামান, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর।