বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সময় স্বামী তার স্ত্রীকে যে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা কিংবা স্থাবর সম্পদ দিয়ে থাকেন, তাই দেনমোহর । দেনমোহর হলো বিয়েতে স্ত্রীর অধীকার , এবং স্বামীর উপর স্ত্রীকে দেনমোহর দেওয়া ফরজ করা হয়েছে ।
মোহরানার পরিমান শরীয়তে বা কোন বিধানে সুনির্দিষ্টভাবে বেঁধে দেয়া হয়নি । বর ও কণের উভয়ের দিক বিবেচনা করে তা নির্ধারিত হয় । তাছাড়া কণের পিতার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে । অপর দিকে বরের আর্থিক ক্ষমতার দিকটি ও গুরুত্ব সহেকারে বিবেচনা করা উছিৎ।
এসব দিক বিচার বিবেচনা করেই দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় । ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ ধারা মোতাবেক দেনমোহর প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও স্ত্রী চাহিবামাত্র সম্পূর্ণ দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে দেন-মোহরের পরিমাণ বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার সময়ে বা বিয়ের আসরে নির্ধারণ করতে হবে এবং এটি সর্ব উত্তম ।বর নিজেই এ চুক্তি করতে পারে ।
দেনমোহর দুটি নিয়মে পরিশোধ করা যায় –
(১) মুয়াজ্জল (আশু) দেন-মোহর ।
(২) মু-অজ্জল (বিলম্বিত) দেন-মোহর ।
(১) মুয়াজ্জল বা আশু হচ্ছে, নগদে স্ত্রীকে প্রদান করা অর্থাৎ বিয়ের আসরে দেনমোহর দিতে হবে। বিয়ের আসরে না দিতে পারলে পারিবারিক জীবন চলাকালীন সময়ে দেনমোহরের যে অংশটুকু স্ত্রী পাওনা রহিয়াছে তাঁর স্বামীর কাছে , চাহিবামাত্র স্বামী পরিশোধ করতে বাধ্য থাকিবে ।
(২) মু-অজ্জল বা বিলম্বিত হচ্ছে, দেনমোহরের যে অংশটুকু স্বামীর মৃত্যুর পর কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের পর স্ত্রী পেয়ে থাকে।
যদি কোন ব্যক্তি স্বামীর স্ত্রীর মোহরানার দায়িত্ব নেয় তবে সে উহা পরিশোধের জন্য দায়ী হবে। বিবাহে দেনমোহরের জন্য জামিনদার থাকলে সেক্ষেত্রেও জামিনদার দেনমোহর পরিশোধে দায়ী থাকিবে। স্বামী মারা যাবার পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেন-মোহর পরিশোধ করতে হবে। উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ঐ দেন-মোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা তা পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারবেন।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ধারা ১০ এ মোহরানা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বিবাহের কাবিননামায় কি ধরণের দেনমোহর স্ত্রীর পাওনা হবে, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা না থাকলে দেনমোহরের অর্থ স্ত্রী চাহিবামাত্রই স্বামী তা পরিশোধ করিতে হইবে । যদি সালিশী পরিষদের আদেশ বলে ইহা কার্যকরী হয় তা হলে স্ত্রী দেনমোহরের অর্থ পাওনা হয়ে যায় । উহা পরিশোধ না করলে ১ মাস কারাদন্ড বা ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে।
স্ত্রী ইচ্ছা করলে তার স্বামী বা স্বামীর উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে আংশিক বা সম্পূর্ণ দেন-মোহর মওকুফ করতে পারে। হতে পারে তা প্রতিদান ব্যতিরেকে। এহেন হ্রাস বা মওকুফ অবশ্যই স্ত্রীর পূর্ণ সন্মতিতে হতে হবে এবং এহেন হ্রাস বা মওকুফ অবশ্যই স্ত্রীর পূর্ণ স্বাধীনতা রহিয়াছে । নাবালক স্ত্রীর দেনমোহর মওকুফ করা যাবেনা কারণ তা অবৈধ। তবে মোহরানা যাই থাকুক না কেন স্বামী নিজ উদ্যোগে মোহরানা বৃদ্ধি করতে পারে।
স্বামী দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নিজ দখলে রাখতে পারবেন । স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় কোন স্ত্রী কোন সম্পত্তি দখলে রাখলে এবং স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ঐ সম্পত্তির দখল ভোগ করতে থাকলে, তার দখলটি বৈধ ও আইনসম্মত । স্ত্রী দখলকৃত সম্পত্তির খাজনা, লাভ বা আয় থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে পারবে । এ সময়ে কেউ তাকে দখল থেকে উচ্ছেদ করলে , সে দখল উদ্ধারের মামলা করতে পারবে।
ধন্যবাদান্তে,
জুরিস্ট কমিউনিকেশন ল ফার্ম
মোবাইলঃ 01886012863
ইমেইলঃ juristcommunication@gmail.com