যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ায় স্বামীর ভিটেটুকুও হারিয়েছেন পটুয়াখালীর নারী মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) জামিনা বেগম।
যুদ্ধাপরাধী আব্দুল গনি হাওলাদারের নিকট আত্মীয় আব্দুল লতিফ তালুকদার, সোহাগ তালুকদার ও আতিক তালুকদার তার শেষ সম্বল স্বামীর ভিটে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন জামিনা বেগম।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন জামিনা বেগম। এসময় তার ছেলে সুজাল তালুকদারসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে জামিনা বেগম জানান, সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের স্বামীর বাড়িতে প্রায় এক একর সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী আব্দুল গনি হাওলাদারের ভাগ্নে আব্দুল লতিফ তালুকদার ও তার দুই ছেলে সোহাগ তালুকদার ও আতিক তালুকদার।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল গনি হাওলাদারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার পরপরই জোরপূর্বক জমি দখল, হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে জানান জামিনা বেগম।
এ নিয়ে স্থানীয় শালিস বৈঠকে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে রোয়েদাদনামা করা হলেও অদ্যাবধি জমি বুঝিয়ে দেয়নি দখলদার চক্রটি। উল্টো তাকে গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।
জামিনা বেগম বলেন, ‘এ বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মাদক দিয়ে আমাকে ও আমার ছেলে-মেয়েদের পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অব্যাহত হুমকির ভয়ে জীবন বাঁচাতে আমি বর্তমানে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ তালুকদার এবং তার দুই ছেলে সোহাগ তালুকদার ও আতিক তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত আতিক তালুকদারের মুঠোফোন প্রথম দিকে খোলা থাকলে একাধিকবার কল দেওয়ার পর পরবর্তীতে তার ফোনের সুইচও অফ করে রাখা হয়। এতে তাদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল গনি হাওলাদারের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক। তবে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগেই ২০২০ সালে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যু হয়।