1. admin@adalatnews.com : Admin :
  2. juristcommunication@gmail.com : muradjc :
মুসলীম আইনে অগ্রক্রয়ের (শুফা) অধিকার, যে দাবী করতে পারে - আদালত নিউজ
শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৬:০৬ অপরাহ্ন

মুসলীম আইনে অগ্রক্রয়ের (শুফা) অধিকার, যে দাবী করতে পারে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১
  • ৫৫৭ Time View
juristcommunication
juristcommunication

মুসলীম আইনে অগ্রক্রয়ের (শুফা) অধিকার যে দাবী করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো ।

অগ্রক্রয়কে আরবীতে ‘শুফা’ বলা হয়। শুফা অর্থ হলো অগ্রক্রয়। কোন সম্পত্তি বিক্রয় হয়ে গেলে তা পুনরায় ক্রয় করার অধিকারকে শুফা বা অগ্রক্রয় বলে । ইহা স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। অগ্রক্রয়ের অধিকার ব্যক্তিগত অধিকার। এই অধিকার উত্তরাধিকারসূত্রে কেউ পেতে পারে না। আবার এটা কাউকে হস্তান্তরও করা যায় না।

 উদাহরণ- আসিফ এবং আবির দুইজন প্রতিবেশী। আসিফ আবিরের সম্মতি ছাড়া তার এক খন্ড জমি কবির এর কাছে বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে আবির উক্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন ।

অগ্রক্রয়ের এই অধিকার প্রয়োগ করে কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিক অন্য একজনের বিক্রিত অপর একটি স্থাবর সম্পত্তি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্রয় করার সুযোগ লাভ করে। এভাবে কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিক কর্তৃক অন্য কোন স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য প্রদান করে ক্রেতার স্থালাভিষিক্ত হওয়ার অধিকারকে ‘অগ্রাধিকার’ (Right of Pre-emption) বলে।

অগ্রক্রয়ের উপাদান (Elements of pre-emption) :

(ক) অগ্রক্রয়কারীকে স্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে হবে ।

(খ) কিছু পরিমাণ সম্পত্তি বিক্রি হবে যা তার নিজের নয় ।

(গ) সম্পত্তিটি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকের সাথে অগ্রক্রয়কারীর একটি সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে।

যে অগ্রক্রয়ের অধিকার দাবী করতে পারে :

শাফি-ই-শরিক : শাফি-ই-শরিক হলো সম্পত্তির সহ-অংশীদার। মুসলীম আইনের অধীনে তিনি প্রথমে অগ্রক্রয়ের অধিকার দাবী জানাতে পারেন।উদাহরণ- আবির এবং আসিফ দুই ভাই এবং সম্পত্তির সহ-অংশীদার। এখানে আবির যদি তার সম্পত্তি কবির এর নিকট বিক্রয় করেন তবে এক্ষেত্রে আসিফের সম্পত্তিটি অগ্রক্রয়ের অধিকার রয়েছে।

শাফি-ই-খলিত : দায়মুক্তি এবং আনুষঙ্গিক বস্তুতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকে শাফি-ই-খলিত বলে। সম্পত্তির ওপর যাতায়ত করার এবং জলপ্রবাহ পাবার অধিকারী ব্যক্তি সম্পত্তিটির অগ্রক্রয়ের দাবী জানাতে পারে। এই অধিকারকে শাফি-ই-খলিত বলে।

শাফি-ই-খলিত হিসেবে কোন ব্যক্তি একমাত্র তখনই অগ্রক্রয়ের দাবী করতে পারে,যখন বিক্রীত সম্পত্তিতে তার বর্তস্বত্বের অধিকার (Right of Easement) থাকে। যেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির বিক্রীত জমির উপর দিয়ে রাস্তার বা পানি নিষ্কাশনের অধিকার থাকে, তাকে অবশ্যই উক্ত সম্পত্তির আনুষঙ্গিকতার অংশীদার বলে গণ্য করতে হবে। তিনি উক্ত জমিতে অগ্রক্রয়ের অধিকার দাবী করতে পারবেন।

সরকারী জমির উপর দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হলে এই নীতিটি প্রযোজ্য হবে না এবং সে অগ্রক্রয় দাবী করতে পারবে না। [AIR 1946(Sindhu) 55]

কোন ব্যক্তি শাফি-ই-খলিত হিসেবে অগ্রক্রয়ের অধিকার দাবী করতে পারবে না যে,তার গাছপালার শাখা-প্রশাখা প্রতিবেশীর জমির উপর গিয়ে পড়েছে।[১০৩ আই.সি ৮৯৭]

খলিত বা বর্তস্বত্বের আওতা রাস্তা এবং পানি নিষ্কাশন ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে অগ্রক্রয়ের উদ্দেশ্য সম্প্রাসরিত হয়নি। এজন্য আলো পাওয়ার বা বায়ু সেবনের অজুহাতে বর্তস্বত্ব দাবী করে মুসলীম আইনে অগ্রক্রয় চলবে না। [AIR 1946 (Rajasthan) P.195]

শাফি-ই-জার : প্রতিবেশী বা সম্পত্তি সংলগ্ন জমির মালিক অগ্রক্রয়ের দাবী জানাতে পারেন। এই অধিকারকে শাফি-ই-জার বলে। শাফি-ই-জার হিসেবে কেবলমাত্র সম্পত্তির মালিকই অগ্রক্রয় করতে পারেন, সম্পত্তির মালিক দখলে আছে কিনা সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। কোন ব্যক্তি সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকলে, উক্ত সম্পত্তিতে তার দখল না থাকলেও সে সম্পত্তি সংলগ্ন জমির মালিক কোন এক খন্ড জমি বিক্রয় করলে তার অগ্রক্রয়ের অধিকার থাকবে । [এ.আই.আর ১৯২৬(পাটনা) ৫৪২]

সম্পত্তির মালিকানা ছাড়া শুধুমাত্র দখলকার কোন ব্যক্তির অগ্রক্রয়ের অধিকার নেই। [PLD 1974 (SC) 11]

প্রথম শ্রেণীর অধিকার দ্বিতীয় শ্রেণীর অধিকারকে এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর অধিকার তৃতীয় শ্রেণীর অধিকারকে বহির্ভূত করে। কিন্তু যখন একই শ্রেণীভূক্ত দুই বা ততোধিক অগ্রক্রয়াধিকারী থাকবে,তখন যে সম্পত্তির ক্ষেত্রে উক্ত অধিকারটির দাবী জানানো হয়েছে, তাতে তারা প্রত্যেকেই সমান দাবী করতে পারবেন।

অগ্রক্রয়ের অধিকার কখন জন্মায় : অগ্রক্রয়ের অধিকার কেবলমাত্র একটি পরিপূর্ণ বিক্রয় বা পণ্য বিনিময় কাজ থেকে জন্মায়। তবে অগ্রক্রয়ের অধিকার দান,ছদকা,ওয়াকফ,মিরাশ, উইল বা স্থায়ীভাবে ইজারা থেকে জন্মায় না। কোন বন্ধক থেকে অগ্রক্রয়ের অধিকার জন্মায় না। তবে বন্ধকটি মুক্ত করার অধিকার নষ্ট হলে সেক্ষেত্রে অগ্রক্রয়ের অধিকার জন্মায়। [AIR 24(Allahabad) 17]

অগ্রক্রয়ের অধিকার কেবল একটি ব্যক্তিগত বিক্রয় থেকে সৃষ্টি হয় না, বরং আদালত বা কোন রিসিভারের মাধ্যমে বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও উক্ত অধিকার সৃষ্টি হতে পারে। [৭১,আই.সি. ৮৩৬]

ভূমিটি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার পর অগ্রক্রয়ের অধিকার জন্মায়। যে তারিখে বিক্রয় দলিলটি রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং স্বত্ব [Title] কার্যকরীভাবে হস্তান্তরিত হয়েছে সেই তারিখ থেকে অগ্রক্রয়ের মামলার কারণ সৃষ্টি হবে। সুতরাং যেক্ষেত্রে কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক সেক্ষেত্রে কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রির তারিখ থেকেই অগ্রক্রয়ের মামলা করার কারণ [Cause of Action] শুরু হবে।

যদি কোনো দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে কার্যকর হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সেই দলিলটি রেজিস্ট্রির তারিখই হলো অগ্রক্রয়ের মামলা দায়ের করার অধিকার সৃষ্টির তারিখ। যদি কোনো দলিল ০২/১২/১৯৭৫ ইং তারিখে রেজিস্ট্রির জন্য উপস্হাপন করা হয় এবং ঐ দলিলটি যদি ২৪/১০/১৯৭৯ ইং তারিখে রেজিস্ট্রি হয় এবং অগ্রক্রয়ের মামলাটি যদি ১৩/০২/১৯৮০ ইং তারিখে দায়ের করা হয়, সেক্ষেত্রে আপীল আদালত উক্ত মামলাটি তামাদি বলে বারিত করতে পারবে না। [31 DLR (AD) 111]

মুসলীম আইন অনুযায়ী অগ্রক্রয়ের দাবী উত্থাপনের পদ্ধতি:

প্রথম দাবী (তলব-ই-মৌসিবত) : শব্দগত অর্থে তলব-ই-মৌসিবত হলো লাফ দিয়ে দাবী করা। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি তা নয়। অগ্রক্রয়কারী ব্যক্তিকে বিক্রয় সম্পূর্ণ হওয়ার সংবাদ পাবার সাথে সাথে অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে নিজের অভিপ্রায় ঘোষণা করতে হবে। এটা মৌখিকভাবে ও করা যেতে পারে আবার লিখিতভাবে ও করা যেতে পারে। প্রথম দাবীর জন্য কোন সাক্ষীর উপস্হিতি অপরিহার্য নয়। সাক্ষীর অনুপস্হিতির কারণে তলব-ই-মৌসিবত অবৈধ হবে না। তবে তলব-ই-মৌসিবত যে যথাযথভাবে এবং যথাসময়ে করা হয়েছিল এই বিষয়ে কিছু প্রমাণ থাকতে হবে।

দ্বিতীয় দাবী (তলব-ই-ইশাদ) : তলব-ই-ইশাদ অর্থ হলো সাক্ষীর সম্মুখে দাবী করা। তলব-ই-মৌসিবত উত্থাপনের পর এটা দ্বিতীয় পদক্ষেপ এবং এটা প্রথম দাবীরই পুনরাবৃত্তি। তবে দ্বিতীয় দাবী কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর সামনে হতে হবে।এজন্য একে ‘তলব-ই-তকরির’ ও বলা হয়। তলব-ই-ইশাদ ঘোষণা আকারে ও হতে পারে, লিখিত আকারেও হতে পারে। আবার মৌখিক আকারেও হতে পারে। ইতিপূর্বে প্রথম দাবী করা না হয়ে থাকলে তলব-ই-ইশাদ অকার্যকর হবে। এটি বিক্রেতা বা ক্রেতাকে সম্বোধন করে প্রকাশ করতে হবে। তবে তাদের কাউকে পাওয়া না গেলে দ্বিতীয় দাবীটি বিক্রিত সম্পত্তিটিকে সম্বোধন করে করতে হবে।

তৃতীয় দাবী (তলব-ই-তমলিক) : তলব-ই-তমলিক প্রথম দুটি দাবীর পরে তৃতীয় দাবী। প্রথম দুটি দাবীর পর যদি ক্রেতা মেনে নেয় এবং তার নিকট সম্পত্তিটি বিক্রয় করে দেয় তাহলে অগ্রক্রয়ের দাবী বাস্তবায়িত হয়। সেক্ষেত্রে আর কোনো অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই এবং ক্রেতার স্হলে অগ্রক্রয়কারী প্রতিস্হাপিত হয়। কিন্তু যদি প্রথম দুটি দাবীর পর অগ্রক্রয়কারী বিক্রীত সম্পত্তিটি পুনরায় ক্রয় করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে আইনগত প্রক্রিয়ার শরনাপন্ন হতে হবে অর্থাৎ আদালতে কোন মামলা দায়ের করতে হবে।

অগ্রক্রয়ের মামলার মেয়াদ :

১৯০৮ সালের প্রথম তফসিলের ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মুসলীম আইনের অধীনে অগ্রক্রয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে বা কেবল দখল অর্পণ যোগে বিক্রয় হয়ে থাকলে সেই দখল অর্পণের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। হানাফী আইন অনুসারে অগ্রক্রয়ের মামলায় ডিক্রী প্রদানের আগে অগ্রক্রয়কারীর মৃত্যু হলে অগ্রক্রয়ের অধিকার নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু শিয়া মতবাদ অনুসারে, ডিক্রী প্রদানের আগে অগ্রক্রয়কারীর মৃত্যু হলে অগ্রক্রয়ের অধিকার নষ্ট হবে না। বরং মৃত ব্যক্তির বৈধ প্রতিনিধি উক্ত মোকদ্দমাটি চালাতে পারবে।

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৯৬ (১) ধারা অনুযায়ী এক বা একাধিক সহ-অংশীদারগণ ৮৯ ধারা অনুযায়ী নোটিশ জারীর ২ মাসের মধ্যে বা ৮৯ ধারা অনুযায়ী যদি নোটিস জারি করা না হয়, তবে বিক্রয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার তারিখ থেকে ২ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন । তবে শর্ত থাকে যে,এই ধারার অধীনে কোন আবেদন বিক্রয় দলিল নিবন্ধিত হওয়ার তারিখ থেকে ৩ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আর করা যাবে না।

অ-কৃষি প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৪৯ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী কোন জমির এক বা একাধিক সহ-অংশীদার [Co-sharer tenant of the land] ২৩ ধারা অনুযায়ী নোটিশ জারীর ৪ মাসের মধ্যে বা ২৩ ধারা অনুযায়ী যদি নোটিস জারি করা না হয়, তবে বিক্রয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার তারিখ থেকে ৪ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন।

মুসলীম আইন অনুসারে অগ্রক্রয়ের দাবী করে মামলা দায়ের করতে হলে দেওয়ানী কার্যবিধির অধীনে আরজি দাখিলের মাধ্যমে দায়ের করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ এবং অ-কৃষি প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৪৯ এর অধীনে অগ্রক্রয়ের দাবী করে মামলা দায়ের করতে হলে পিটিশন দাখিলের মাধ্যমে বিবিধ মোকদ্দমা হিসেবে দায়ের করা যাবে।

ক্রেতা কি মুসলিম হতে হবে :

গোবিন্দ দয়াল বনাম ইনায়েতুল্লাহ[(১৯৮৫) ৭ এলাহাবাদ] মামলায় বলা হয়, অগ্রক্রয়ের অধিকার বলবৎ করার জন্য ক্রেতাকে মুসলমান হবার দরকার নেই।

ধন্যবাদান্তে,

জুরিস্ট কমিউনিকেশন ল ফার্ম

মোবাইলঃ 01886012863

ইমেইলঃ juristcommunication@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

ক্যাটাগরি

© All rights reserved © 2022 AdalatNews

Developed By AdalatNews