রিভিশন হলো ক্ষমতা সম্পন্ন উচ্চ আদালত কর্তৃক নিম্ন আদালতের কোন মামলার সিদ্ধান্ত সঠিক করার জন্য সংশোধন করে দেওয়া । আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে রিভিশন আবেদন দায়েরের প্রধান কারণ হলো দেওয়ানী আদালতের আইনগত ভুল সনাক্ত করে ন্যায় বিচারের ব্যর্থতা সমাপন করা। রিভিশনের বিধান দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৫ ধারায় আলোচনা করা হয়েছে । ১১৫ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ এবং জেলা জজের রিভিশন ক্ষমতা আছে। ১১৫ ধারায় রিভিশন ক্ষমতা হলো নিয়ন্ত্রণ মূলক । বিচারিক আদালত এবং আপীল আদালত কোন আইনগত ভুল করলে, উক্ত ভুল সংশোধনে জেলা জজ বা হাইকোর্ট ডিভিশন রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
ক) অধস্তন আদালতের মোকদ্দমার নথি তলব করতে পারবে-
খ) ন্যায়বিচার যেন ব্যর্থ না হয় সে জন্য অধস্তন আদালতের ডিক্রী এবং আদেশের ক্ষেত্রে কোন আইনগত ভুল পরিলক্ষিত হলে উক্ত ডিক্রী বা আদেশ সংশোধন করতে পারবে বা যেমন যথাযথ মনে করে তেমন আদেশ দিতে পারে।
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি প্রণয়নের সময় থেকেই অধস্তন আদালতের উপর বিচারিক নিয়ন্ত্রণের জন্য হাইকোর্টকে ১১৫ ধারায় রিভিশন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল । ১১৫ ধারায় হাইকোর্টের এই ক্ষমতা রিভিশন ক্ষমতা নামে পরিচিত। এই ক্ষমতা দেয়ার মূল কারণ ছিল, যখন কোন আদালতকে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তখন এটা যেমন সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে, ঠিক তেমনি ভুল সিদ্ধান্ত ও দিতে পারে। যেক্ষেত্রে বিচারিক আদালত এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে কোন এখতিয়ারগত ভুল, পদ্ধতিগত ভুল বা বিষয় বস্তুগত ভুল করবে, তখনই হাইকোর্ট তার রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। ১৯৭৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশন ক্ষমতা ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে ১১৫ ধারা সংশোধন করে জেলা জজকে তার অধস্তন আদালতসমূহের বিচারিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রিভিশন ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালের সংশোধনের মাধ্যমে জেলা জজ এই রিভিশন ক্ষমতা বাতিল করা হয়। ২০০৩ সালে দেওয়ানী কার্যবিধির সংশোধনের মাধ্যমে পুনরায় জেলা জজকে সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং যুগ্ম জেলা জজের শুধুমাত্র আপীলঅযোগ্য আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
অর্থাৎ জেল জজ (অতিরিক্ত জেলা জজ) শুধুমাত্র যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং সহকারী জজের আপীলঅযোগ্য আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং সহকারী জজ প্রদত্ত আপিল যোগ্য ডিক্রর বিরুদ্ধে রিভিশন, হাইকোর্টে দায়ের করতে হয়।
২০০৩ সালে দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধনীর ফলে দেওয়ানী কার্যবিধিতে অনুমতি সাপেক্ষে দ্বিতীয় রিভিশনের বিধান করা হয়েছে। দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৫(৪) নং উপধারায় বলা হয়েছে, জেলা জজ কিংবা অতিরিক্ত জেলা জজের রিভিশনে প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট ডিভিশনে আবেদন করা যাবে, যদি হাইকোর্ট বিভাগ রিভিশন দায়েরের আবেদন অনুমোদন করে।
অর্থাৎ জেলা জজ কর্তৃক রিভিশন মামলায় প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ পক্ষ হাইকোর্ট বিভাগে অনুমতি সাপেক্ষে রিভিশন দায়ের করতে পারে। অর্থাৎ ২০০৩ সাল হতে অনুমতি সাপেক্ষে দ্বিতীয় রিভিশনের বিধান আছে।
অন্যদিকে জেলা জজের এবং অতিরিক্ত জেলা জজের আপীলঅযোগ্য ডিক্রী এবং আদেশ উভয় ক্ষেত্রে হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করা যাবে।
গৌরাঙ্গ চন্দ্র বনাম ডেপুটি কমিশনার, মামলায় সহকারী জজ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার
আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং উক্ত প্রত্যাখ্যান আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজের নিকট আপীল করা হয়েছিল। জেলা জজ উক্ত আপীল শুনানীর জন্য যুগ্ম জেলা জজের নিকট প্রেরণ করেছিল। যুগ্ম জেলা জজ উক্ত আপীল খারিজ করেছিল। উক্ত খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করা হলে হাইকোর্টের এক বিচারপতির সম্বনয়ে গঠিত বিচারিক বেঞ্চ ১১৫ ধারায় সিদ্ধান্ত দেয় যে, যুগ্ম জেলা জজ প্রদত্ত আপীল অযোগ্য আদেশ হাইকোর্টের রিভিশন ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত না।
কিন্তু আব্দুস সালাম বনাম বাংলাদেশ, ৩৩ ডিএলআর ১৪১ মামলায় বলা হয় যে, যেহেতু জেলা জজ সহকারী জজের অস্থায়ী আদেশের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপীলটি যুগ্ন জেলা জজের নিকট প্রেরণ করেছে, তাই এই ক্ষেত্রে যুগ্ন জেলা জজ, জেলা জজের এখতিয়ার প্রয়োগ করেছে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে যুগ্ম জেলা জজের আপীল খারিজের আদেশ, জেলা জজের আদেশের সমান। সুতরাং এই ক্ষেত্রে যুগ্ন জেলা জজের আপীল খারিজের আদেশ হাইকোর্টের রিভিশন এখতিয়ারভুক্ত ।
১।জেলা জজ আদালত এবং অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের আপীলঅযোগ্য ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে।
সহকারী জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এবং যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আপীলঅযোগ্য ডিক্রীর বিরুদ্ধে
হাইকোর্ট বিভাগে।
২। সহকারী জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এবং যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আপীলঅযোগ্য আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে।
সুতরাং এটা বলা যায় যে কোন আদালতে রিভিশন দায়ের করতে হবে, তা মোকদ্দমার মূল্যমান অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় না বরং ডিক্রী এবং আদেশের প্রকৃতি অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হয়। আপীলঅযোগ্য ডিক্রীর ক্ষেত্রে রিভিশন জেলা জজ বা হাইকোর্টে দায়ের করতে হবে। কিন্তু আপীলঅযোগ্য ডিক্রীর (যে আদালত প্রদান করুক না কেন) বিরুদ্ধে রিভিশন সর্বদা হাইকোর্টে দায়ের করতে হবে। যেমন যুগ্ন জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং সহকারী জজ আপীলঅযোগ্য আদেশ দিলে, তার বিরুদ্ধে সর্বদা জেলা জজের নিকট রিভিশন দায়ের করতে হবে এবং জেলা জজ আপীলঅযোগ্য আদেশ দিলে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করতে হবে। কিন্তু আপীলঅযোগ্য ডিক্রী হলে তার বিরুদ্ধে সর্বদা হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করতে হবে। যেমন সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় যদি সহকারি জজ কোন ডিক্রী প্রদান করে, তাহলে উক্ত ডিক্রীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করতে হবে। কারণ ৯ ধারার ডিক্রীটি আপীলঅযোগ্য কিন্তু এর বিরুদ্ধে রিভিশন করা যায়।
ধন্যবাদান্তে,
জুরিস্ট কমিউনিকেশন ল ফার্ম
মোবাইলঃ 01886012863
ইমেইলঃ juristcommunication@gmail.com