হাইকোর্ট বিভাগ বা সুপ্রীম কোর্ট এ মামলা নিয়ে কখন আসতে হয় বা দেশের এই উচ্চ আদালতে কোন কোন ধরনের মামলা করা যায় সে বিষয়ে ধারনা দিতেই আজকের এই লেখা। যদি বিচারপ্রার্থী সাধারন কোনো ব্যক্তি নিম্ন আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে ঐ ব্যক্তি ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারেন । তাছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি চান তাহলে তিনি উচ্চ আদালতে আগাম জামিন, অন্তর্বর্তীকালীন জামিন, রিট মামলা এবং জনস্বার্থ বিষয়ক যেকোনো বিষয়ে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্টই হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। সাধারণত উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির পর তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়ে যায়।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের দুটি শাখা রয়েছে । একটি শাখা হচ্ছে হাইকোর্ট বিভাগ এবং অন্য শাখাটি হলো আপিল বিভাগ। সাধারনত যেসব বিষয়ে হাইকোর্টে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়ঃ সাধারণত নিম্ন আদালত বা জেলা জজ আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সংখুদ্ধ পক্ষ চাইলে ঐ নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগ বা উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করতে পারেন। তাছাড়া নিম্ন আদালতের রায়ে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ-এর আদেশ হলে তা বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার পক্ষ হাইকোর্টের অনুমোদন নেয়ার জন্য হাইকোর্টে আসতে পারে।
এছাড়াও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন কোনো বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েও উচ্চ আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। এ ছাড়া কিছু বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ স্বপ্রনোদিত হয়ে কোনো নির্দিষ্ট মামলার ব্যাপারে নিম্ন আদালতকে নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মামলাটিকে উচ্চ আদালতে বিচারকার্জ পরিচালনা করার জন্য নিয়ে আসতে পারেন।
এমন অনেক মোকদ্দমার বিষয়বস্তু রয়েছে যার জন্য সরাসরি হাইকোর্ট বিভাগে মোকদ্দমা দায়ের করার জন্য যেতে হয়,
যেমন : কোম্পানি সংক্রান্ত মোকদ্দমা, খ্রিস্টান বিবাহ সংক্রান্ত মোকদ্দমা, এডমিরালিটি বা সমুদ্রগামী জাহাজ সংক্রান্ত মোকদ্দমা ইত্যাদি। বাংলাদেশের হাইকোর্টের মোট ৩৩টি বেঞ্চ বা আসন রয়েছে। তারমধ্যে বেশির ভাগই দ্বৈত বেঞ্চ বা আসন। কয়েকটি একক বেঞ্চ বা আসনও রয়েছে।
রিট কোনো সাধারন নাগরিক জনস্বার্থ বা ব্যক্তিগত বিষয়ে বা সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে তিনি চাইলে সংবিধানের ১০২ অণুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করতে পারেন। রিট দায়েরের বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে সাধারন মামলার মতো মনে হলেও দুইটির বিষয়বস্তুর মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। অপরদিকে কেউ যদি মনে করেন যে সরকারের প্রণীত কোনো আইন প্রচলিত অপর কোনো আইনের পরিপন্থী বা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সেই ক্ষেত্রে নতুনভাবে প্রণীত আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করেও রিট দায়ের করা যায়। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্র বিশেষে রিট এবং সাধারণ মামলা দুটিই দায়ের করা যায়। সাধারণত রিটে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সাধারন মোকদ্দমার তুলনায় রিট অনেক দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।
আগাম জামিন কোনো মোকদ্দমায় জেলা জজ আদালত জামিন দিতে অস্বীকার করলে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বা উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত বিবেচনা সাপেক্ষে জামিনের আদেশ দিতে পারেন। এসকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মোকদ্দমাটি নিম্ন আদালতে বিচার পক্রিয়া চলমান অবস্থায় থাকে, তারপরেও অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পাবার সুযোগ পান। সাধারণত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আগাম জামিনের সুবিধা ভোগ করে থাকেন। যখন কোনো ব্যক্তি আশঙ্কা করেন যে তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মোকদ্দমা দায়ের হতে পারে, তখন তিনি আগে থেকেই হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ মোকদ্দমার গুরুত্ব বুঝে আগাম জামিনের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়ে থাকলেও ওই মোকদ্দমায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন জামিন যখন কোনো ব্যক্তি কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিম্ন আদালতে বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন, তখন নিম্ন আদালত সন্তুষ্ট না হয়ে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে দিলে ঐ ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের জন্য পুনরায় আবেদন করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ যদি জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে দেন তাহলে তিনি আপিল বিভাগেও জামিনের আবেদন করতে পারবেন।তাহলে দেখা যাচ্ছে নিন্ম আদালত থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত মামলার কয়েকটি স্তর রয়েছে। তবে আপিল বিভাগের রায় চূড়ান্ত রায় বলে গণ্য হবে।
কারা মামলা করতে পারেন বাংলাদেশের এখতিয়ার সম্পন্ন যে কোনো আদালতে বিচার প্রার্থী যদি ইচ্ছে করেন তাহলে নিজের মামাল নিজে নিজেই পরিচালনা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। তবে আইনগত অনেক বিষয় রয়েছে যা সাধারন মানুষের পক্ষে বোধগম্য নাও হতে পারে, ঐসকল দিক বিবেচনা করে আত্মপক্ষ সমর্থন বা নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া একান্ত আবশ্যক। সাধারণত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত আইনজীবী যিনি উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করার জন্য ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, শুধুমাত্র ওনারাই উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন।
আপিল বিভাগ বাংলাদেশে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ সন্তুষ্ট না হলে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন দাখিল করতে পারবেন। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত আপিল বিভাগের রায়ই চূড়ান্ত রায় বলে গণ্য হয়। তবে কোনো ব্যক্তি যদি আপিল বিভাগের রায়েও সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি একই বিভাগে পুনরায় রায়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন দাখিল করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চ বা আসন রয়েছে।